December 27, 2024, 10:18 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দীর্ঘ প্রতিক্ষীত রেল সংযোগ পেল নড়াইলবাসী। এই প্রথমবারের মতো সরাসরি রেল পরিষেবায় যুক্ত হলো দক্ষিণ-পশ্চিমের এ জেলা। উন্নয়নের নতুন ধারার সাথে সংযুক্ত গতে পেরে প্রচন্ড উচ্ছাসিত জেলার মানুষ। নড়াইলের মানুষ ট্রেনে চেপে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ঢাকা যেতে পারবে। এক পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে সবকিছু।
গতবছর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল পরিষেবা চালু হবার পর দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর অংশের যাত্রা শুরু হলো। খুলনা-ঢাকা-বেনাপোল-ঢাকা-খুলনা রুটের ট্রেন চলবে নড়াইলের ওপর দিয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল, ২৪ ডিসেম্বর থেকে এ রুটে জাহানাবাদ ও রূপালী এক্সপ্রেস নামে একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ পড়েছে নড়াইল জেলায়। নড়াইল শহর ও লোহাগড়া উপজেলায় একটি করে রেলস্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে।
নড়াইল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হিসেবে যোগ দিয়েছেন উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ট্রেন দুটি ছয়দিন চলাচল করবে। সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। দিনে দুবার ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোলে চলাচল করবে।
তিনি জানান, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছার নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত ৮টায়। খুলনায় পৌঁছার নির্ধারিত সময় ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছার কথা বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে। ঢাকায় পৌঁছার কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। প্রকল্পে রেলস্টেশন রয়েছে ২০টি। এর ১৪টি নতুন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রডগেজ এ রেললাইন নয়টি জেলার ওপর দিয়ে গেছে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নগরকান্দা, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, মহেশপুর, কাশিয়ানী, নড়াইলের লোহাগড়া ও জামদিয়া হয়ে যশোরের রূপদিয়া রেললাইনে মিশেছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী ও যশোরের পদ্মবিলায় রেলওয়ে জংশন হবে। লোহাগড়া পৌর এলাকার নারানদিয়া ও দুর্গাপুরে রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে লোহাগড়া রেলস্টেশনের দূরত্ব ১২৩ ও নড়াইল রেলস্টেশনের দূরত্ব হবে ১৩৮ কিলোমিটার।
নড়াইলবাসী বলছেন, রেল চালুর ফলে কম সময়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার সাথে এ যোগাযোগের সুযোগ পাল্টে দেবে এ জেলার চিত্র। শিক্ষা, ব্যবসা ও অর্থনীতিতে দারুণ পরিবর্তন আসবে।
নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাসানউজ্জামানের মতে, রেললাইন চালু হলে বেশি উপকৃত হবেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকা, বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বল্প খরচে সহজেই বিভিন্ন পণ্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিবহন করতে পারবেন। লাইনটি চালু হলে জেলার কয়েক হাজার ব্যবসায়ী উপকৃত হবেন।’
একটি হিসেব দেন সদর উপজেলার পানচাষী মো: আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ঢাকায় যে পান ২৫০ টাকা পোন (৮০ পিস) বিক্রি হয়, সে পান নড়াইলে ৫০ টাকায়। এখন এই পান সরাসরি ঢাকায় নিয়ে পান বিক্রি করা যাবে। এতে তার মতো অনেক কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে মনে করেন এ প্রান্তিক কৃষক।
জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, ‘নড়াইলের মানুষের বড় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রশাসন বিভিন্ন দিকে নজর রাখছে। কারন, নতুন উন্মোচনের পর ছোটখাট অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেগুলো দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহন করে ট্রেন যাত্রা নির্বিঘœ করা হবে।
Leave a Reply